শনিবার মালে সফররত জয়শংকরের সঙ্গে দেখা করেন মলদ্বীপের ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ শহিদ৷
বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ও মলদ্বীপের বিদেশমন্ত্রী মুসা জমির শীঘ্রই পুনরুদ্ধার এবং উপকূল সুরক্ষা প্রকল্পের হস্তান্তর অনুষ্ঠান এবং চার-লেনের ডিট্যুর লিঙ্ক রোড প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন । রবিবার জয়শংকরকে আড্ডু সিটিতে স্বাগত জানান মলদ্বীপের বিদেশমন্ত্রী মুসা জমির ।
তিনি তাঁর এক্স হ্যান্ডেলে জানিয়েছেন, এই দুটি প্রকল্পই ভারত সরকার এক্সিম ব্যাঙ্কের এলওসি-এর অধীনে সহায়তা করেছে৷ তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, এই প্রকল্পগুলি আড্ডু সিটির মানুষের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধিতে অবদান রাখবে৷
মুসা জমির তাঁর পোস্টে লেখেন, “বিদেশমন্ত্রী (ভারতের) এস জয়শংকরকে স্বাগত জানাতে পেরে আনন্দিত৷ আমরা শীঘ্রই পুনরুদ্ধার এবং উপকূল সুরক্ষা প্রকল্পের হস্তান্তর অনুষ্ঠান এবং চার-লেন ডিট্যুর লিঙ্ক রোড প্রকল্পের উদ্বোধন শুরু করব । দুটি প্রকল্পেই ভারত সরকার সহায়তা করেছে৷ আড্ডু সিটির মানুষের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধিতে তা অবদান রাখবে৷”
এর আগে শনিবার মালে সফররত জয়শংকরের সঙ্গে দেখা করেন মলদ্বীপের ডেমোক্রেটিক পার্টির (এমডিপি) প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ শহিদ৷ ভারত সর্বদা প্রয়োজনের সময়ে মলদ্বীপকে সহায়তা করবে বলে তিনি আস্থা প্রকাশ করেন। পূর্ববর্তী সরকারের ভারত বিরোধী অবস্থানের জন্য দু'দেশের অর্থনৈতিক এবং কূটনৈতিক সম্পর্ক ধাক্কা খেয়েছে বলে মনে করেন তিনি৷ একইসঙ্গে সরকারের পরিবর্তনে উন্নত সম্পর্কের আশাপ্রকাশ করেন শহিদ৷
এমডিপি ভারতের অর্থায়নকৃত বিভিন্ন প্রকল্পের উল্লেখ করে একটি বিবৃতিও জারি করেছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “মলদ্বীপ-ভারত সম্পর্ক সর্বদা পারস্পরিক শ্রদ্ধা, আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধার নীতির উপর ভিত্তি করে রয়েছে । পারস্পরিক শ্রদ্ধার মধ্যে রয়েছে আঞ্চলিক অখণ্ডতা, আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য একটি অভিন্ন আকাঙ্ক্ষা এবং একটি উন্মুক্ত ও শান্তিপূর্ণ ভারত মহাসাগর৷”
এমডিপি এই সফরের সময় নোট বিনিময়কে স্বাগত জানিয়েছে৷ প্রেসিডেন্ট সোলিহ সরকারের সময় আরও ১০০০ সিভিল সার্ভিস অফিসারকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মানবসম্পদ কর্মসূচি শুরু করা হয়েছিল৷ তাছাড়া জয়শঙ্কর শনিবার ভারতের অর্থায়নে মলদ্বীপে ১১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের একটি বড় জল ও নিকাশি প্রকল্প হস্তান্তর করেছেন। দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য পুনরায় বিদেশমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত হওয়ার পরে এটাই দ্বীপরাষ্ট্রে প্রথম সফর জয়শংকরের।
এর আগে গত ১০ আগস্ট মলদ্বীপের রাজধানী মালেতে গিয়ে সে দেশের প্রেসিডেন্ট মহম্মদ মুইজ্জুর সঙ্গে বৈঠক করলেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। শনিবার, তিন দিনের মলদ্বীপ সফরের দ্বিতীয় দিনে ওই বৈঠকের পরে এক্স হ্যান্ডলে জয়শঙ্কর লেখেন, ‘‘প্রেসিডেন্ট মহম্মদ মুইজ্জুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পেরে আমি সৌভাগ্যবান। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর শুভেচ্ছাবার্তা জানিয়েছিন তাঁকে।’’
বিদেশ মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নতিতে নানা দিক নিয়ে আলোচনা করেছেন দুই রাষ্ট্রনেতা। এক্স পোস্টে জয়শঙ্কর লিখেছেন, ‘‘আমাদের জনগণ এবং আঞ্চলিক পরিস্থিতি উন্নত করার লক্ষ্যে ভারত-মলদ্বীপ সম্পর্ক আরও গভীর করতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’’
প্রসঙ্গত, লোকসভা নির্বাচনে এনডিএ ফের ক্ষমতা দখলের পরে এই প্রথম মলদ্বীপ সফরে গেলেন জয়শঙ্কর। এর আগে ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে মালে গিয়েছিলেন তিনি।
শুক্রবার বিকেলে মালেতে পৌঁছে রাতেই মলদ্বীপের বিদেশমন্ত্রী মুসা জ়ামিরের সঙ্গে বৈঠক করেন জয়শঙ্কর। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের ‘প্রতিবেশী প্রথম’ নীতির অন্যতম ভিত্তিই হল মলদ্বীপ। ভারতের কাছে প্রতিবেশী হল অগ্রাধিকার আর প্রতিবেশীদের মধ্যে মলদ্বীপ হল আমাদের অগ্রাধিকার। দু’দেশের মধ্যে ঐতিহাসিক সম্পর্কও খুব নিবিড়। ভারত এবার ‘ইউনিফায়েড পেমেন্ট ইন্টারফেজ’ বা ইউপিআই পরিষেবা চালু করতে চলেছে দ্বীপরাষ্ট্র মলদ্বীপে।’’
গত জানুয়ারিতে মুইজ্জু সরকারের তিন মন্ত্রীর মোদী-বিরোধী মন্তব্যের পরে নয়াদিল্লি-মালে কূটনৈতিক টানাপড়েন তৈরি হয়েছিল। ‘চিনপন্থী’ হিসাবে পরিচিত মুইজ্জু মে মাসের মধ্যে মলদ্বীপে সামরিক সহায়তায় অংশ নেওয়া ভারতীয় সেনাকে দেশে ফেরার নির্দেশ দেওয়ার পরে কার্যত সংঘাত প্রকাশ্যে চলে এসেছিল। যদিও পরবর্তী সময়ে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে স্থিতিশীলতা আসে।
জুন মাসে মোদী সরকারের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মলদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মুইজ্জু। এই পরিস্থিতিতে জয়শঙ্করের তিন দিনের মলদ্বীপ সফর কৌশলগত দিক থেকে নতুন গুরুত্ব পেয়েছে। বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের খবর, তাঁর এই সফরে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক পর্যালোচনার পাশাপাশি দু’দেশের স্বার্থের দিকগুলি চিহ্নিত করা হবে। বাণিজ্য সংক্রান্ত চুক্তিও সই হতে পারে। খবর: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক