জ্বালানী গবেষণা খাতে সম্পর্ক গভীর করতে চায় ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র। মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে এ বিষয়ে বিশদ কথা হয়েছে।
পরিচ্ছন্ন জ্বালানি সহযোগিতা শক্তিশালী করার লক্ষ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের কৌশলগত পরিচ্ছন্ন জ্বালানি অংশীদারিত্ব (এসসিইপি) মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক এই সপ্তাহের শুরুর দিকে ওয়াশিংটন ডিসিতে অনুষ্ঠিত হয়। উচ্চপর্যায়ের এই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন মার্কিন জ্বালানি সচিব জেনিফার গ্রানহোম এবং ভারতের পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস মন্ত্রী হরদীপ সিং পুরী। বৈঠকে এসসিইপি -এর পাঁচটি মূল স্তম্ভ—বিদ্যুৎ ও জ্বালানি দক্ষতা, দায়িত্বশীল তেল ও গ্যাস, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, উদীয়মান জ্বালানি ও প্রযুক্তি এবং টেকসই প্রবৃদ্ধি—এর অধীনে বিভিন্ন উদ্যোগ পর্যালোচনা করা হয়।

সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪) অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে উভয় দেশ এসব স্তম্ভের অধীনে অর্জিত সাফল্যকে স্বাগত জানায় এবং পরিচ্ছন্ন জ্বালানিতে রূপান্তর দ্রুততর করার, জ্বালানি নিরাপত্তা বাড়ানোর এবং পরিচ্ছন্ন জ্বালানি উৎপাদনের জন্য টেকসই ও বৈচিত্র্যময় সরবরাহ শৃঙ্খল তৈরির প্রতি যৌথ প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে। বৈঠক শেষে প্রকাশিত এক যৌথ বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়।

পরিচ্ছন্ন জ্বালানি ও প্রযুক্তি অগ্রগতি: বৈঠকে একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্জন হিসেবে ২০২৩ সালের আগস্টে নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রযুক্তি কর্মপরিকল্পনা প্ল্যাটফর্ম (রিটাপ) এর আনুষ্ঠানিক সূচনার কথা তুলে ধরা হয়। হাইড্রোজেন, দীর্ঘমেয়াদী জ্বালানি সঞ্চয়, অফশোর উইন্ড এবং ভূ-তাপীয় বিদ্যুৎসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাস্তবায়নযোগ্য পরিকল্পনা তৈরি করা রিটাপ -এর মূল লক্ষ্য। গবেষণা ও উন্নয়ন, পাইলট প্রকল্প এবং উদ্যোগ ও বিনিয়োগ শিল্পের সাথে সহযোগিতার মাধ্যমে, রিটাপ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি প্রযুক্তির অগ্রগতি ত্বরান্বিত করবে।

মন্ত্রীগণ রিটাপ এর অধীনে ভারতের জাতীয় হাইড্রোজেন সুরক্ষা কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠা এবং ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক সবুজ হাইড্রোজেন সম্মেলনের সফল আয়োজনের জন্য সন্তোষ প্রকাশ করেন। এসব উদ্যোগ পরিবহন খাত, যেমন বাস, ট্রাক্টর এবং ভারী যন্ত্রপাতিতে পরিচ্ছন্ন হাইড্রোজেনের ব্যবহার বাড়ানোর লক্ষ্যে করা হয়েছে।

জ্বালানি সঞ্চয় ও গ্রিড একীভবন: নবায়নযোগ্য জ্বালানির সাথে গ্রিডের একীকরণে জ্বালানি সঞ্চয়ের গুরুত্ব অনুধাবন করে মন্ত্রীগণ পাবলিক-প্রাইভেট এনার্জি স্টোরেজ টাস্ক ফোর্সের সূচনা স্বাগত জানান। এই উদ্যোগ নীতি, নিয়ন্ত্রক বিষয় এবং নিরাপত্তা মানসমূহকে সমাধান করবে। এছাড়া জ্বালানি সঞ্চয় প্রযুক্তির জন্য সরবরাহ শৃঙ্খলা ও উৎপাদন কাঠামো নিয়ে কাজ করবে। আসাম ও হরিয়ানায় ব্যাটারি এনার্জি স্টোরেজ সিস্টেম (বিইএসএস) এর কার্যকারিতা পরীক্ষার প্রকল্পগুলি এই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে চলছে।

বিদ্যুৎ বিতরণের আধুনিকীকরণ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি সংগ্রহ: উভয় দেশ বিদ্যুৎ বিতরণ খাতের আধুনিকীকরণের উপর গুরুত্ব দিয়েছে, যা ক্রমাগত নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করবে। ভারতের উচ্চাভিলাষী স্মার্ট মিটারিং প্রকল্প এবং চলমান বিদ্যুৎ বাজার সংস্কারের উদ্যোগগুলোকেও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রীগণ ভারতের রেলওয়ের ২০৩০ সালের মধ্যে নিট-শূন্য নির্গমন অর্জনের প্রচেষ্টা এবং ১.৫ গিগাওয়াটেরও বেশি নিরবচ্ছিন্ন নবায়নযোগ্য জ্বালানি সংগ্রহের প্রশংসা করেন।

টেকসই বিমান চলাচল ও পরিবহন বৈদ্যুতিকীকরণ: আলোচনা টেকসই বিমান জ্বালানী (এসএএফ) এর উপরও প্রসারিত হয়, যেখানে উভয় দেশ এই খাতে গবেষণা, উন্নয়ন, সার্টিফিকেশন প্রক্রিয়া এবং বাণিজ্যিক অংশীদারিত্ব বাড়াতে একটি এসএএফ কর্মশালার সূচনা করেছে। পরিবহন খাতে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী ই-বাস সেবা প্রকল্পের অধীনে ১০,০০০ বৈদ্যুতিক বাস স্থাপনের উদ্যোগকে পরিবহন খাতের বৈদ্যুতিকীকরণের একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হিসেবে তুলে ধরা হয়।  

সিসিইউএস এবং মিথেন নিরোধক উদ্যোগ: কার্বন ক্যাপচার, ইউটিলাইজেশন এবং স্টোরেজ (সিসিইউএস) এর উপর সহযোগিতা বাড়ানোর প্রতি গুরুত্ব দিয়ে মন্ত্রীগণ ভারতের সিসিইউএস মিশনের উন্নয়নের জন্য কারিগরি ও নিয়ন্ত্রক দিকগুলি নিয়ে আলোচনা করেন। তেল ও গ্যাস খাতের মিথেন নিরোধক প্রচেষ্টাও উল্লেখ করা হয়, যা হাইড্রোকার্বন অধিদপ্তরের সাথে পরিবেশগত কৌশলগুলোর অংশ হিসেবে পরিচালিত হচ্ছে।

সরকার-বেসরকারি সহযোগিতা ও বিনিয়োগ: মন্ত্রীগণ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি প্রযুক্তির বিস্তার এবং ব্যয় হ্রাসে সহায়ক নীতি ও নিয়ন্ত্রক কাঠামো তৈরিতে সরকারি-বেসরকারি সংলাপের অপরিহার্য ভূমিকার প্রশংসা করেন। তারা সম্প্রতি টেক্সাসে ভারতীয় কোম্পানি ওয়ারির দ্বারা স্থাপিত ৩ গিগাওয়াটের সোলার মডিউল উৎপাদন সুবিধার মতো পরিচ্ছন্ন জ্বালানি খাতে উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগকে স্বাগত জানান।

এসসিইপি অংশীদারিত্বের অগ্রগতির সাথে, উভয় দেশ সর্বস্তরের সরকারের সক্ষমতা বৃদ্ধির এবং একটি ন্যায়সংগত ও টেকসই জ্বালানি রূপান্তর নিশ্চিত করার জন্য অভিজ্ঞতা বিনিময় এবং সর্বোত্তম অনুশীলন ভাগাভাগি করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে। মন্ত্রীগণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-ভারত অংশীদারিত্বের বিস্তৃত প্রকৃতির প্রশংসা করেছেন, যা বৈশ্বিক পরিচ্ছন্ন জ্বালানি দৃশ্যপটকে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত করবে এবং বর্তমান জলবায়ু চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

এই নতুন অংশীদারিত্ব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারতের মধ্যে একটি যৌথ দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত করে, যেখানে শুধু টেকসই জ্বালানিতে রূপান্তরের অঙ্গীকারই নয়, বৈশ্বিক পরিবেশগত সমস্যার মুখোমুখি হয়ে কৌশলগত সহযোগিতার মাধ্যমে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও জোরদার করার দিকেও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সূত্র: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক