মহড়াটি গত কয়েক বছর ধরেই অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর পারস্পরিক বিশ্বাস স্থাপনের একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করছে।
ভারতীয় নৌবাহিনীর জাহাজ (আইএনএস) সত্যপুরায় ৯ অক্টোবর ২০২৪ তারিখে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শুরু হওয়া ২৮তম মালাবার মহড়া, একটি বহুজাতিক সমুদ্র মহড়া, ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সামুদ্রিক নিরাপত্তা এবং স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান এবং অস্ট্রেলিয়ার নৌবাহিনীর অঙ্গীকার প্রদর্শন করার মঞ্চ হিসেবে কাজ করছে।
ভারতীয় নৌবাহিনীর পূর্ব নৌ কমান্ডের (ইএনসি) আওতায় আয়োজিত এই ১০ দিনের মহড়া ৮ থেকে ১৮ অক্টোবর ২০২৪ পর্যন্ত চলবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি পূর্ব নৌ কমান্ডের ফ্ল্যাগ অফিসার কমান্ডিং ইন চিফ, ভাইস অ্যাডমিরাল রাজেশ পেনধরকারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর সিনিয়র নৌ কর্মকর্তারা এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখযোগ্য অতিথিদের মধ্যে ছিলেন জাপানের প্রধান স্টাফ জেনারেল ইয়োশিহিদে ইয়োশিদা, যুক্তরাষ্ট্রের প্যাসিফিক ফ্লিটের কমান্ডার অ্যাডমিরাল স্টিফেন কোহলার, জাপানের আত্মরক্ষামূলক নৌবাহিনীর কমান্ডার-ইন-চিফ ভাইস অ্যাডমিরাল কাটসুশি ওমাচি, এবং অস্ট্রেলিয়ান নৌবাহিনীর কমান্ডার রিয়ার অ্যাডমিরাল ক্রিস স্মিথ।
ভাইস অ্যাডমিরাল পেনধরকার তার উদ্বোধনী বক্তব্যে মহড়াটির মাধ্যমে অংশগ্রহণকারী নৌবাহিনীর মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক বৃদ্ধি এবং সহযোগিতার গুরুত্ব তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘মালাবার ২০২৪ ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সমুদ্র নিরাপত্তা এবং সমমনা দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতার জন্য ভারতীয় নৌবাহিনীর প্রতিশ্রুতি পুনঃনিশ্চিত করে। আমাদের যৌথ প্রচেষ্টা অপারেশনাল সমন্বয় বৃদ্ধির পাশাপাশি বন্ধুত্বের সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করতে সহায়ক হবে।’
১৯৯২ সালে ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক মহড়া হিসেবে শুরু হওয়া মালাবার মহড়া আজ জাপান এবং অস্ট্রেলিয়াকেও অন্তর্ভুক্ত করে। এই বছর পঞ্চমবারের মতো চারটি দেশ একসঙ্গে অংশগ্রহণ করছে, যা তাদের যৌথ সক্ষমতা প্রদর্শনের পাশাপাশি উন্নত যুদ্ধ কৌশলের একীকরণকে এগিয়ে নিচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্যাসিফিক ফ্লিটের কমান্ডার অ্যাডমিরাল স্টিফেন কোহলার মহড়ার গুরুত্ব পুনরায় উল্লেখ করেন, ‘মালাবার হল একটি যৌথ দল হিসেবে একত্রে কাজ করে সংঘাত প্রতিরোধ এবং মুক্ত ও খোলা ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রতি আমাদের অঙ্গীকার পুনরায় নিশ্চিত করার একটি দুর্দান্ত উদাহরণ।’
চার নৌবাহিনীর যৌথ জটিল অনুশীলন
মালাবার ২০২৪ মহড়া দুটি পর্যায়ে পরিচালিত হবে: একটি হাবর পর্ব এবং একটি সাগরে অনুশীলনের পর্ব। মহড়াটি পৃষ্ঠ, বিমানবিধ্বংসী, এবং সাবমেরিনবিরোধী যুদ্ধের অপারেশন অন্তর্ভুক্ত করবে। অংশগ্রহণকারী নৌবাহিনী যৌথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবে এবং অস্ত্র চালনা করবে, যা কৌশলগত একীকরণ এবং অপারেশনাল সমন্বয় উন্নত করবে।
সাগরে অনুশীলনের সময় বিভিন্ন নৌবাহিনীর জাহাজ, ফ্রিগেট, করভেট, এবং বহরের সহায়ক জাহাজের পাশাপাশি দীর্ঘপাল্লার নৌ টহল বিমান, জেট, হেলিকপ্টার এবং সাবমেরিন অংশগ্রহণ করবে।
জাপানের মেরিটাইম সেলফ ডিফেন্স ফোর্সের ভাইস অ্যাডমিরাল কাটসুশি ওমাচি আশাবাদ প্রকাশ করে বলেন, ‘মালাবার শান্তি, স্থিতিশীলতা, এবং একটি নিয়মভিত্তিক সামুদ্রিক শৃঙ্খলার প্রচার করবে।
জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত এবং অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে সহযোগিতা শক্তিশালী হচ্ছে।’
মালাবার মহড়া ভারতের আঞ্চলিক সমুদ্র সহযোগিতার অঙ্গীকারের প্রতিফলন ঘটায়। ভারতের নেতৃত্বে এই মহড়া পরিচালনা তার প্রভাবশালী ভূমিকা ও আন্তর্জাতিক সমুদ্র অংশীদারদের সঙ্গে সক্রিয় সম্পৃক্ততা প্রদর্শন করছে।
ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে প্রতিরক্ষা সহযোগিতার পরিবর্তনশীল গতি
চার জাতির অংশগ্রহণ ইন্দো-প্রশান্ত অঞ্চলে প্রতিরক্ষা সহযোগিতার পরিবর্তনশীল গতি প্রদর্শন করছে। ২০২০ সালে অস্ট্রেলিয়া পুনরায় যোগদান করার মাধ্যমে মহড়ার ব্যাপকতা আরও বেড়েছে।
এ বছরের মহড়ার নেতৃত্ব দিচ্ছে ভারত, যা বৃহৎ আকারের বহুজাতিক অনুশীলন পরিচালনার ক্ষমতা এবং এই অঞ্চলে শান্তি ও নিরাপত্তা প্রচারের প্রতিফলন। ১৮ অক্টোবর ২০২৪-এ মহড়া শেষ হবে, এবং অংশগ্রহণকারী নৌবাহিনীগুলো আরও সুশৃঙ্খল এবং সমন্বিত সমুদ্র অপারেশন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করছে। মালাবার মহড়া আঞ্চলিক এবং বৈশ্বিক সামুদ্রিক শৃঙ্খলা রক্ষায় একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে অব্যাহত থাকবে। সূত্র: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক