ভারত ও ফিলিপাইন কূটনৈতিক সম্পর্কের ৭৫ বছর উদযাপন করছে। দীর্ঘ যাত্রাপথে উভয় দেশই গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে অভিন্ন অবস্থান রেখেছে।
মহেশ রঞ্জন দেবতা: ১৩ই নভেম্বর, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. সুব্রহ্মণ্যম জয়শঙ্কর, ফিলিপাইনের ভারতে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত জোসেল এফ. ইগনাসিও এবং ফিলিপাইনের পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী মারিয়া রিকা সি. বুয়েনোর সঙ্গে মিলে একটি যৌথ লোগো উন্মোচন করেন। এটি ভারত ও ফিলিপাইনের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৭৫ বছর পূর্তির স্মারক।
এই লোগোতে দুটি দেশের জাতীয় পতাকা ও পাখির চিত্র ব্যবহার করা হয়েছে, যা সাত দশকেরও বেশি সময় ধরে বিদ্যমান “অটুট বন্ধুত্ব, সাংস্কৃতিক সম্পর্ক এবং অভিন্ন মূল্যবোধ” প্রতিফলিত করে।
অ্যাক্ট ইস্ট পলিসির ১০ বছর এবং বিশেষ সম্পর্ক
এই বিশেষ উদযাপন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকারের ‘অ্যাক্ট ইস্ট পলিসি’-এর ১০ বছর পূর্তির সাথেও মিলে গেছে। এই নীতির অধীনে ভারত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি করেছে, যার মধ্যে ফিলিপাইন একটি বিশেষ অংশীদার।
সম্প্রতি সম্পর্কের উন্নতি
গত কয়েক মাস ভারত ও ফিলিপাইনের সম্পর্কের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ছিল। ২০২৪ সালের ৯ই সেপ্টেম্বর ১৪তম ভারত-ফিলিপাইন নীতিগত পরামর্শ আলোচনা এবং ৫ম কৌশলগত সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। এর এক মাস পরে, ১৬ই অক্টোবর, প্রথম আসিয়ান-ভারত সাইবার নীতি সংলাপ হয়। উভয় ক্ষেত্রে, উভয় দেশ প্রতিরক্ষা, নিরাপত্তা, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, শক্তি, কৃষি, প্রযুক্তি, মহাকাশ, সংস্কৃতি এবং জনগণের মধ্যে সংযোগ বৃদ্ধির জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়।
দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা কমিশন
২০১১ সালে ‘দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা কমিশন’ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ভারত ও ফিলিপাইনের সম্পর্ক নতুন গতি পায়। এটি ২০১৩, ২০১৫, ২০২০ এবং ২০২৩ সালে আবার বৈঠক করে। বিশেষত, ২০১৩ এবং ২০২৩ সালের বৈঠকগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ২০১৩ সালের বৈঠকে ‘জঙ্গিবাদ বিরোধী যৌথ কর্মদল’ গঠনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। অন্যদিকে, ২০২৩ সালে উভয় দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা প্রতিরক্ষা ও বাণিজ্য খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধি নিয়ে আলোচনা করেন।
প্রতিরক্ষা সহযোগিতা
প্রতিরক্ষা খাতে, উভয় দেশের মধ্যে উচ্চ-পর্যায়ের সংলাপ, প্রশিক্ষণ এবং যৌথ সামরিক মহড়া অনুষ্ঠিত হয়েছে। ভারতের ‘ব্রহ্মোস’ ক্ষেপণাস্ত্র ফিলিপাইনের প্রথম আন্তর্জাতিক ক্রয়। ২০২২ সালের জানুয়ারিতে, ফিলিপাইনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ব্রহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্র ক্রয়ের জন্য ভারতের সঙ্গে ৩৭৫ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি স্বাক্ষর করে।
বাণিজ্য সম্পর্ক
বাণিজ্য, ভারত-ফিলিপাইন সম্পর্কের মূল ভিত্তি। ২০১০ সালে এই বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০২৩-২৪ সালে এটি প্রায় ৩.৬ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের এপ্রিল-আগস্ট সময়ে বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১.৩৩৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক ইস্যুতে সহযোগিতা
উভয় দেশই জাতিসংঘের সংস্কার, সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধ এবং জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে একমত। ফিলিপাইন ভারতের ‘ভয়েস অব দ্য গ্লোবাল সাউথ’ সম্মেলনের সাফল্যের জন্য প্রশংসা করেছে। উভয় দেশই ‘মুক্ত, উন্মুক্ত এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক’ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
উপসংহার
গত ৭৫ বছরে ভারত ও ফিলিপাইনের সম্পর্ক বন্ধুত্ব, পারস্পরিক বিশ্বাস এবং সহযোগিতার ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। আগামীতে এই সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে এবং উভয় দেশের কল্যাণে ভূমিকা রাখবে।
লেখক: জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়, নয়াদিল্লির আন্তর্জাতিক অধ্যয়ন বিভাগের অন্তর্ভুক্ত ইনার এশিয়ান স্টাডিজ কেন্দ্রের শিক্ষক; এখানে প্রকাশিত মতামত তাঁর ব্যক্তিগত। সূত্র: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক
এই লোগোতে দুটি দেশের জাতীয় পতাকা ও পাখির চিত্র ব্যবহার করা হয়েছে, যা সাত দশকেরও বেশি সময় ধরে বিদ্যমান “অটুট বন্ধুত্ব, সাংস্কৃতিক সম্পর্ক এবং অভিন্ন মূল্যবোধ” প্রতিফলিত করে।
অ্যাক্ট ইস্ট পলিসির ১০ বছর এবং বিশেষ সম্পর্ক
এই বিশেষ উদযাপন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকারের ‘অ্যাক্ট ইস্ট পলিসি’-এর ১০ বছর পূর্তির সাথেও মিলে গেছে। এই নীতির অধীনে ভারত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি করেছে, যার মধ্যে ফিলিপাইন একটি বিশেষ অংশীদার।
সম্প্রতি সম্পর্কের উন্নতি
গত কয়েক মাস ভারত ও ফিলিপাইনের সম্পর্কের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ছিল। ২০২৪ সালের ৯ই সেপ্টেম্বর ১৪তম ভারত-ফিলিপাইন নীতিগত পরামর্শ আলোচনা এবং ৫ম কৌশলগত সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। এর এক মাস পরে, ১৬ই অক্টোবর, প্রথম আসিয়ান-ভারত সাইবার নীতি সংলাপ হয়। উভয় ক্ষেত্রে, উভয় দেশ প্রতিরক্ষা, নিরাপত্তা, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, শক্তি, কৃষি, প্রযুক্তি, মহাকাশ, সংস্কৃতি এবং জনগণের মধ্যে সংযোগ বৃদ্ধির জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়।
দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা কমিশন
২০১১ সালে ‘দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা কমিশন’ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ভারত ও ফিলিপাইনের সম্পর্ক নতুন গতি পায়। এটি ২০১৩, ২০১৫, ২০২০ এবং ২০২৩ সালে আবার বৈঠক করে। বিশেষত, ২০১৩ এবং ২০২৩ সালের বৈঠকগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ২০১৩ সালের বৈঠকে ‘জঙ্গিবাদ বিরোধী যৌথ কর্মদল’ গঠনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। অন্যদিকে, ২০২৩ সালে উভয় দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা প্রতিরক্ষা ও বাণিজ্য খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধি নিয়ে আলোচনা করেন।
প্রতিরক্ষা সহযোগিতা
প্রতিরক্ষা খাতে, উভয় দেশের মধ্যে উচ্চ-পর্যায়ের সংলাপ, প্রশিক্ষণ এবং যৌথ সামরিক মহড়া অনুষ্ঠিত হয়েছে। ভারতের ‘ব্রহ্মোস’ ক্ষেপণাস্ত্র ফিলিপাইনের প্রথম আন্তর্জাতিক ক্রয়। ২০২২ সালের জানুয়ারিতে, ফিলিপাইনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ব্রহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্র ক্রয়ের জন্য ভারতের সঙ্গে ৩৭৫ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি স্বাক্ষর করে।
বাণিজ্য সম্পর্ক
বাণিজ্য, ভারত-ফিলিপাইন সম্পর্কের মূল ভিত্তি। ২০১০ সালে এই বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০২৩-২৪ সালে এটি প্রায় ৩.৬ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের এপ্রিল-আগস্ট সময়ে বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১.৩৩৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক ইস্যুতে সহযোগিতা
উভয় দেশই জাতিসংঘের সংস্কার, সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধ এবং জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে একমত। ফিলিপাইন ভারতের ‘ভয়েস অব দ্য গ্লোবাল সাউথ’ সম্মেলনের সাফল্যের জন্য প্রশংসা করেছে। উভয় দেশই ‘মুক্ত, উন্মুক্ত এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক’ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
উপসংহার
গত ৭৫ বছরে ভারত ও ফিলিপাইনের সম্পর্ক বন্ধুত্ব, পারস্পরিক বিশ্বাস এবং সহযোগিতার ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। আগামীতে এই সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে এবং উভয় দেশের কল্যাণে ভূমিকা রাখবে।
লেখক: জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়, নয়াদিল্লির আন্তর্জাতিক অধ্যয়ন বিভাগের অন্তর্ভুক্ত ইনার এশিয়ান স্টাডিজ কেন্দ্রের শিক্ষক; এখানে প্রকাশিত মতামত তাঁর ব্যক্তিগত। সূত্র: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক