সফরটি প্রতিবেশী দুই দেশের পারস্পরিক বিশ্বাসকে নতুন করে সুদৃঢ় করেছে।
নিহার আর নায়ক: অর্থনৈতিক সংকট থেকে ধীরে ধীরে পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়ার মধ্যে, শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রপতি অনুরা কুমারা দিশানায়েকে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে দায়িত্ব নেওয়ার পর তার প্রথম আন্তর্জাতিক সফরে ভারত গেছেন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে এই সফরটি অনুষ্ঠিত হয়। ভারত, শ্রীলঙ্কার অন্যতম নিকট প্রতিবেশী, ২,৫০০ বছরের পুরনো সভ্যতাগত সম্পর্ক, কৌশলগত অবস্থান এবং আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক উদ্যোগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কারণে নয়াদিল্লির ‘প্রতিবেশী-প্রথম’ নীতিতে বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে।
কলম্বোয় নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর রাষ্ট্রপতির প্রথম সফরের জন্য শ্রীলঙ্কার ভারতকে বেছে নেওয়া এই দুই দেশের পারস্পরিক বিশ্বাস, বন্ধুত্ব এবং কৌশলগত নির্ভরশীলতার প্রমাণ বহন করে।
সফরের তাৎপর্য
কলম্বোর নতুন প্রশাসনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্গঠনের জন্য এই সফরটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। জনতা বিমুক্তি পেরামুনা (জনতার মুক্তি ফ্রন্ট, যা জেভিপি নামেও পরিচিত) দলটি প্রথমবারের মতো দেশের শীর্ষ নির্বাহী পদে এসেছে এবং দলটি আদর্শগতভাবে কমিউনিস্ট নীতিতে বিশ্বাসী।
ঐতিহাসিকভাবে এবং আদর্শগতভাবে, জেভিপি ভারতের শ্রীলঙ্কা বিষয়ক অবস্থানের সমালোচক ছিল। তাই, এই সফরটি পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলি আলোচনার এবং উদীয়মান আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জের আলোকে একে অপরকে সমর্থন করার সুযোগ প্রদান করে।
সফরের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল অর্থনৈতিক ও উন্নয়ন বিষয়ক আলোচনা, যা শ্রীলঙ্কার চলমান আর্থিক সংকট পুনরুদ্ধার কর্মসূচি সম্পর্কে ভারতের সমর্থন নিশ্চিত করতে সহায়ক।
ভারত-শ্রীলঙ্কা সম্পর্ক
দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের পর থেকে দ্বিপাক্ষিক মিথস্ক্রিয়ার গভীরতা তাদের পারস্পরিক নির্ভরতা এবং স্থায়ী বন্ধুত্বকে তুলে ধরে। শ্রীলঙ্কা ভারতের নিকটতম সমুদ্র প্রতিবেশী এবং ভারতের সাগর ভিশনের অপরিহার্য অংশ। দুর্যোগ, কোভিড-১৯ মহামারি বা শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক সংকট (২০২২) - যেকোনো পরিস্থিতিতে ভারত সবসময় প্রথমে সাড়া দিয়েছে।
অর্থনৈতিক দিক থেকে, ভারত শ্রীলঙ্কার সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদার। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ৫.৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। ভারত শ্রীলঙ্কার শীর্ষ বিনিয়োগকারীদের মধ্যেও অন্যতম, যেখানে ২০২৩ সালের মধ্যে মোট বিনিয়োগ ২.২ বিলিয়ন ডলার। তাছাড়া, ভারত উন্নয়ন অংশীদার হিসেবে ৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ এবং ৬০০ মিলিয়ন ডলার অনুদান প্রদান করেছে।
সফরের ফলাফল
সফরটি অত্যন্ত সফল ছিল এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইতিবাচক ফলাফল অর্জিত হয়েছে। ‘ভবিষ্যতের জন্য অংশীদারিত্ব জোরদার করা’ শীর্ষক নতুন কাঠামো প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী মোদি শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, পুনরুদ্ধার ও বৃদ্ধির প্রচেষ্টায় ভারতের অটুট প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি শ্রীলঙ্কার ঋণের বোঝা লাঘব এবং দীর্ঘমেয়াদি টেকসই অর্থনৈতিক সুযোগ সৃষ্টি নিশ্চিত করার জন্য বিনিয়োগ ও অনুদানকে অগ্রাধিকার দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
ভারত ২০.৬৬ মিলিয়ন ডলার অনুদান হিসেবে একটি ঋণচুক্তির অধীনে সাতটি সম্পন্ন প্রকল্পের অর্থ পরিশোধে সহায়তা করেছে। এছাড়া, কঙ্কেসানথুরাই বন্দরের পুনর্বাসন প্রকল্প, যার মূল্য ৬১.৫ মিলিয়ন ডলার, অনুদান হিসেবে বাস্তবায়িত হবে।
উপসংহার
সফরটি অত্যন্ত উষ্ণতা এবং বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনার বিষয়বস্তু এবং স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকগুলো দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে নতুন করে উদ্দীপনা দিয়েছে। ‘ভবিষ্যতের জন্য অংশীদারিত্ব জোরদার করা’ শীর্ষক নতুন কাঠামো সম্পর্ককে আরও উন্নত করতে একটি মূল্যবান নির্দেশিকা হিসেবে কাজ করতে পারে।
ভারতের ধারাবাহিক সমর্থন এবং ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে নয়াদিল্লির সংবেদনশীলতাগুলি বিবেচনায় নিয়ে কলম্বোর প্রচেষ্টা, এই অঞ্চলে নেতিবাচক প্রভাব প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। সূত্র: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক।