দু দেশের সমন্বিত অর্থনৈতিক সহযোগিতা চুক্তি সম্পাদনা নিয়ে আলোচনা এখন সম্পূর্ণ গতিতে চলছে বলে জানা গিয়েছে।
ভারত-অস্ট্রেলিয়া অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও বাণিজ্য চুক্তি (ইসিটিএ) দুই বছরের সাফল্যের মাইলফলক অর্জন করেছে, যা দুই দেশের অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বকে শক্তিশালী করেছে এবং পারস্পরিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করেছে। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে চুক্তি কার্যকর হওয়ার পর থেকে এটি দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ককে উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়ে তুলেছে এবং ব্যবসা, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ, এবং কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ তৈরি করেছে।

দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি
চুক্তি কার্যকর হওয়ার পর থেকে দ্বিপাক্ষিক পণ্য বাণিজ্যে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি দেখা গেছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে ১২.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছরে এটি বেড়ে ২৬ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। যদিও ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এটি কিছুটা কমে ২৪ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে, তবে অস্ট্রেলিয়ায় ভারতের রপ্তানি ১৪% বৃদ্ধি পেয়েছে।

২০২৪ সালের এপ্রিল থেকে নভেম্বর পর্যন্ত পণ্য বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১৬.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা এই ধারা বজায় রাখার ইঙ্গিত দেয়।
বস্ত্র, রাসায়নিক, এবং কৃষিক্ষেত্রের মতো প্রধান খাতগুলো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি লাভ করেছে, যেখানে হীরার অলঙ্কৃত সোনা এবং টার্বোজেটের মতো নতুন রপ্তানি পণ্যগুলোর মাধ্যমে চুক্তি বৈচিত্র্য আনতে সক্ষম হয়েছে। আমদানির দিক থেকে, ধাতব আকরিক, তুলা এবং কাঠের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাঁচামাল ভারতীয় শিল্পকে সহায়তা করেছে, যা এই অংশীদারিত্বের সুবিধাজনক দিকগুলোকে তুলে ধরেছে।
তবে, ইলেকট্রনিক্স এবং প্রকৌশল খাতে আরও উন্নয়নের সুযোগ রয়েছে।

বাণিজ্য সুবিধার উচ্চ ব্যবহার
ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয় জানিয়েছে যে ইসিটিএ-র বাণিজ্য সুবিধার ব্যবহার হার যথেষ্ট উচ্চ, ২০২৩ সালের মধ্যে রপ্তানি ব্যবহারের হার ৭৯% এবং আমদানির হার ৮৪%। এই পরিসংখ্যানগুলো ব্যবসার জন্য চুক্তি কার্যকর করতে এবং প্রক্রিয়াগত বাধা কমাতে এর কার্যকারিতা তুলে ধরে।

চুক্তি ভারতের অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি হ্রাস করতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ২০২৪ সালের এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত, অস্ট্রেলিয়ায় ভারতের পণ্য রপ্তানি ছিল ৩.৯৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যেখানে গত বছর একই সময়ে এটি ছিল ৪.৮৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা ১৮% হ্রাস নির্দেশ করে। আমদানিও ১৮% হ্রাস পেয়েছে, যার ফলে বাণিজ্য ঘাটতি কমেছে এবং বাণিজ্যে বেশি ভারসাম্য এসেছে।

সমন্বিত অর্থনৈতিক সহযোগিতা চুক্তি (সিইসিএ)
ভারত-অস্ট্রেলিয়া ইসিটিএ-র সাফল্যের ওপর ভিত্তি করে, সমন্বিত অর্থনৈতিক সহযোগিতা চুক্তি (সিইসিএ) নিয়ে আলোচনা সম্পূর্ণ গতিতে চলছে। সিইসিএ দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য এজেন্ডাকে আরও গভীর করতে পাঁচটি মূল ক্ষেত্র অন্তর্ভুক্ত করার লক্ষ্যে কাজ করছে: পণ্য, পরিষেবা, ডিজিটাল বাণিজ্য, সরকারি ক্রয়, এবং পণ্যের নির্দিষ্ট উৎপত্তি বিধি।

২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে দশটি আনুষ্ঠানিক আলোচনা এবং অন্তর্বর্তীকালীন বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। সর্বশেষ পর্যালোচনা বৈঠক ২০২৪ সালের ৪-৬ ডিসেম্বর দিল্লিতে অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে পণ্য ও পরিষেবা বাণিজ্য, চলাচল, এবং কৃষি-প্রযুক্তি সহযোগিতা নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা হয়। ভারতের প্রতিনিধি দল, রাজেশ আগরওয়াল (অতিরিক্ত সচিব ও প্রধান আলোচক, বাণিজ্য বিভাগ)-এর নেতৃত্বে, অস্ট্রেলিয়ার প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করেন, যাদের নেতৃত্বে ছিলেন রবি কেওয়ালরাম (প্রথম সহকারী সচিব, পররাষ্ট্র ও বাণিজ্য বিভাগ)।

আলোচনায় মূল দৃষ্টিভঙ্গিগুলো অন্তর্ভুক্ত ছিল: ভারতের খাদ্য নিরাপত্তা লক্ষ্যগুলোর সঙ্গে বাজার প্রবেশ প্রক্রিয়া সমন্বয় করা, গুরুত্বপূর্ণ খনিজ, উদ্ভাবন, এমএসএমইএস, এবং খেলাধুলার মতো উদীয়মান খাতগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করা, এবং কৃষি উদ্ভাবন ও সরবরাহ শৃঙ্খল স্থিতিশীলতা উন্নত করা।

ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধি
ভারত-অস্ট্রেলিয়া অংশীদারিত্ব আরও প্রবৃদ্ধির জন্য প্রস্তুত। উভয় দেশ ২০৩০ সালের মধ্যে ১০০ বিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলারের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য লক্ষ্য স্থির করেছে।

সিইসিএ-র সফল বাস্তবায়ন এই লক্ষ্য অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে, যা অর্থনৈতিক সংহতি গভীর করবে এবং বাজারে প্রবেশাধিকার বাড়াবে।

পরিষ্কার জ্বালানি সহযোগিতায় পারস্পরিক প্রতিশ্রুতি এবং উদীয়মান খাতগুলোর অন্তর্ভুক্তি এই অংশীদারিত্বের গতিশীল প্রকৃতি নির্দেশ করে। ২০৪৭ সালের মধ্যে উন্নত জাতি হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির পরিকল্পনার সঙ্গে ভারতের দৃষ্টি উভয় দেশের লক্ষ্যগুলোর সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।

উপসংহার
ভারত-অস্ট্রেলিয়া ইসিটিএ একটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বের ভিত্তি স্থাপন করেছে, যা উভয় দেশের ব্যবসা ও শিল্পকে উল্লেখযোগ্য সুবিধা প্রদান করেছে। তৃতীয় বছরে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে, এ পর্যন্ত অর্জিত অগ্রগতি ভারত এবং অস্ট্রেলিয়ার সহযোগিতার সম্ভাবনার সাক্ষ্য দেয়।

সিইসিএ বাস্তবায়নের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক অর্থনৈতিক সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে, যা শুধুমাত্র উভয় জাতির সমৃদ্ধিতে নয় বরং একটি আরও স্থিতিশীল এবং গতিশীল বৈশ্বিক অর্থনীতিতে অবদান রাখবে। সূত্র: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক।