বর্তমান প্রবণতা অনুযায়ী, ২০২৮ সালের মধ্যে ভারত ১ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের রপ্তানি অর্জনের পথে রয়েছে বলে প্রত্যাশা।
২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে, ভারত মেক ইন ইন্ডিয়া উদ্যোগের ১০ম বার্ষিকী উদযাপন করেছে, যা দেশের উৎপাদন খাত এবং রপ্তানির ওপর গভীর প্রভাব ফেলেছে। ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কর্তৃক চালু হওয়া এই কর্মসূচি ভারতের উৎপাদন খাতকে বৈশ্বিক কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করার লক্ষ্যে বিভিন্ন সেক্টরে উৎপাদন বৃদ্ধি করেছে। এই প্রচেষ্টার ফলে আমদানি নির্ভরতা হ্রাস পেয়েছে এবং রপ্তানি সক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা বিশ্ব অর্থনীতিতে ভারতের ভূমিকা উঁচুতে তুলেছে।

গত এক দশকে মেক ইন ইন্ডিয়া কর্মসূচি উৎপাদন খাতে এক অভূতপূর্ব প্রবৃদ্ধির প্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে, ইলেকট্রনিক্স, ইস্পাত, নবায়নযোগ্য শক্তি, বৈদ্যুতিক যানবাহন এবং প্রতিরক্ষা খাতে রপ্তানির বিশাল বৃদ্ধি লক্ষ্য করা গেছে। এই উদ্যোগের সফলতা আজ ভারতের রপ্তানি বৃদ্ধি, বিদেশি বিনিয়োগের উত্থান এবং ব্যবসা করার সহজতার উন্নতিতে দৃশ্যমান।

বিভিন্ন সেক্টরে প্রবৃদ্ধির অগ্রযাত্রা 
মেক ইন ইন্ডিয়া চালু হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন সেক্টরে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি লক্ষ্য করা গেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ইলেকট্রনিক্স শিল্পে দেখা গেছে, বিশেষত মোবাইল উৎপাদনে। ২০১৪ সালে ভারতে মাত্র দুটি মোবাইল উৎপাদন ইউনিট ছিল, কিন্তু ২০২৪ সালের মধ্যে এই সংখ্যা বেড়ে ২০০-র বেশি হয়েছে। মোবাইল রপ্তানি একসময় মাত্র ₹১,৫৫৬ কোটি ছিল, যা এখন ₹১.২ লাখ কোটি ছাড়িয়েছে—যা ৭,৫০০% প্রবৃদ্ধি। বর্তমানে, ভারত দেশীয় ব্যবহারের ৯৯% মোবাইল উৎপাদন করে, যা তাকে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মোবাইল প্রস্তুতকারক করেছে।

অন্যান্য সেক্টরও সমানভাবে চমকপ্রদ প্রবৃদ্ধি দেখেছে। উদাহরণস্বরূপ, ভারত এখন সমাপ্ত ইস্পাতের একটি নেট রপ্তানিকারক এবং সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদনে ₹১.৫ লাখ কোটিরও বেশি বিনিয়োগ করেছে। নবায়নযোগ্য শক্তি ক্ষেত্রেও ভারত চতুর্থ বৃহত্তম উৎপাদক হিসেবে উঠে এসেছে, গত এক দশকে এর ক্ষমতা ৪০০% বৃদ্ধি পেয়েছে।

বৈদ্যুতিক যানবাহনের বাজার, যা ২০১৪ সালে প্রায় অদৃশ্য ছিল, এখন $৩ বিলিয়ন মূল্যের একটি খাত। ভারতের প্রতিরক্ষা রপ্তানি ₹১,০০০ কোটি থেকে ₹২১,০০০ কোটিতে পৌঁছেছে, যা ৮৫টি দেশে ছড়িয়ে রয়েছে। এসব অর্জন মেক ইন ইন্ডিয়ার সাফল্যকে আরও প্রমাণ করে, যা ভারতকে একটি উৎপাদন শক্তিশালী জাতিতে রূপান্তরিত করেছে।

ভারতের রপ্তানি সর্বকালের শীর্ষে 
মেক ইন ইন্ডিয়া উদ্যোগের ফলে বিভিন্ন সেক্টরে রপ্তানির উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি লক্ষ্য করা গেছে, যা ভারতকে বৈশ্বিক বাণিজ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। ২০২২ অর্থবছরে ভারতের উৎপাদন রপ্তানি সর্বকালের সর্বোচ্চ $৪১৮ বিলিয়ন ছাড়িয়েছে, এবং ২০২৮ সালের মধ্যে $১ ট্রিলিয়ন রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পথে রয়েছে।

ভারতের বস্ত্র এবং পোশাক শিল্প, যা দেশের রপ্তানির প্রধান অংশ, এই সময়কালে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২২ অর্থবছরে বস্ত্র এবং পোশাক রপ্তানি $৪৪.৪ বিলিয়নে পৌঁছেছে, যা বছরে ৪১% বৃদ্ধি। তেমনি, রাসায়নিক শিল্পেও রপ্তানির ব্যাপক বৃদ্ধি লক্ষ্য করা গেছে, যা জৈব এবং অজৈব রাসায়নিক, রং, এবং কৃষি রাসায়নিকের চাহিদা বৃদ্ধির কারণে ঘটেছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে রাসায়নিক রপ্তানি $৮.২৪ বিলিয়নে পৌঁছেছে।

ভারতের ঔষধ শিল্প, যা ভারতের রপ্তানি কৌশলের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, মেক ইন ইন্ডিয়ার মাধ্যমে উল্লেখযোগ্যভাবে উপকৃত হয়েছে। ভারতের ক্রুড স্টিল উৎপাদনে দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ হিসেবে রপ্তানি ১৩.৪৯ মিলিয়ন টনে পৌঁছেছে।

মেক ইন ইন্ডিয়ার লক্ষ্যগুলোর মধ্যে একটি ছিল ভারতের ব্যবসা করার সহজতায় উন্নতি আনা। গত এক দশকে দেশটি এই ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে, বৈদেশিক প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ (এফডিআই) আকর্ষণ করে নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে।

উত্পাদন এবং রপ্তানি খাত আরও উন্নতির পথে 
২০২১ সালে জাতীয় সিঙ্গেল উইন্ডো সিস্টেম (এনএসডব্লিউএস) চালুর মাধ্যমে ব্যবসার প্রক্রিয়া সরলীকরণ হয়েছে। এর পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী গতি শক্তি কর্মসূচি উৎপাদন জোনে মাল্টিমোডাল সংযোগ উন্নত করেছে, যার ফলে লজিস্টিক খরচ কমেছে।

মেক ইন ইন্ডিয়া শুধুমাত্র ভারতের উৎপাদন খাতের চেহারা পাল্টায়নি, বরং দেশটিকে বৈশ্বিক রপ্তানিতে একজন নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। সূত্র: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক